১২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যানের জামিন মেলেনি হাইকোর্টে

নিজস্ব প্রতিনিধি

এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যানের জামিন মেলেনি হাইকোর্টে

পিরোজপুরে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি রাগীব আহসানকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। জামিন না দিয়ে আবেদনটি ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মুফতি রাগীবের জামিন আবেদন ফেরত দেন।

আদালতে আজ আসামি পক্ষের শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরান আহমেদ ভূঁইয়া।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন গ্রাহকদের একাংশ। তাদের অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠানটি লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফতি রাগীব আহসান এলাকাবাসী জন্য সঞ্চয়ী হিসাব চালু করেন। জমা করা টাকার ওপর মাসিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে পাসবইসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে টাকা জমা নেওয়া হয়।

গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েক মাস মাসিক মুনাফা দেওয়ার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নানান কথা বলে গ্রাহকদের সঙ্গে টালবাহানা করতে থাকেন রাগীব ও তার সহযোগিরা। এভাবে প্রায় তিন বছর চলার পর টাকা ফেরত না দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের কোনো এক রাতে শের-ই-বাংলা পাবলিক লাইব্রেরির চতুর্থ তলায় এহসান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, অফিস বন্ধের আগেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের সব নথিপত্র সরিয়ে ফেলেছে।

এরপর পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা হারুন-অর-রশিদ বাদী হয়ে মুফতি রাগীব ও তার চার ভাইকে আসামি করে ৯৭ গ্রাহকের ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৩ টাকা আত্মসাতের মামলা করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তোপখানা সড়ক এলাকা থেকে মুফতি রাগীব আহসান ও তার ভাই আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। ওই দিন বিকেলে পিরোজপুর সদর থানা-পুলিশ রাগীবের অন্য দুই ভাই মাহমুদুল হাসান ও খাইরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।

ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সকালে র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মুফতি রাগীব ও তার সহযোগিদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই দিনে মাহমুদুল হাসান ও খাইরুল ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে র‍্যাব রাগীব আহসান ও আবুল বাশার খানকে পিরোজপুর সদর থানায় সোপর্দ করলে পুলিশও তাদের একই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

এরপর রাগীব ও তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পিরোজপুর সদর থানায় পৃথক পাঁচটি মামলা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এসব মামলার মধ্যে চারটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ও একটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়।

গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাগীব আহসান ও তার তিন ভাইয়ের সাতদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠান পিরোজপুরের আদালত।

জানা যায়, গ্রাহকদের কাছে থেকে টাকা নিতে ইমাম, খাদেম ও ধর্মীয় বক্তাদের ব্যবহার করে এহসান গ্রুপ। পরে ওই টাকা দিয়ে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নামে জমি কেনেন রাগীব। সেসব জমির ৯০ শতাংশ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। একপর্যায়ে এহসান গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৬টিই উধাও হয়ে যায়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় : ১২:৩৯:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
২০৫ বার পড়া হয়েছে

এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যানের জামিন মেলেনি হাইকোর্টে

আপডেট সময় : ১২:৩৯:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

পিরোজপুরে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি রাগীব আহসানকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। জামিন না দিয়ে আবেদনটি ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মুফতি রাগীবের জামিন আবেদন ফেরত দেন।

আদালতে আজ আসামি পক্ষের শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরান আহমেদ ভূঁইয়া।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন গ্রাহকদের একাংশ। তাদের অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠানটি লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুফতি রাগীব আহসান এলাকাবাসী জন্য সঞ্চয়ী হিসাব চালু করেন। জমা করা টাকার ওপর মাসিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে পাসবইসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে টাকা জমা নেওয়া হয়।

গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েক মাস মাসিক মুনাফা দেওয়ার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নানান কথা বলে গ্রাহকদের সঙ্গে টালবাহানা করতে থাকেন রাগীব ও তার সহযোগিরা। এভাবে প্রায় তিন বছর চলার পর টাকা ফেরত না দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের কোনো এক রাতে শের-ই-বাংলা পাবলিক লাইব্রেরির চতুর্থ তলায় এহসান গ্রুপের প্রধান কার্যালয় তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, অফিস বন্ধের আগেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের সব নথিপত্র সরিয়ে ফেলেছে।

এরপর পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা হারুন-অর-রশিদ বাদী হয়ে মুফতি রাগীব ও তার চার ভাইকে আসামি করে ৯৭ গ্রাহকের ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৩ টাকা আত্মসাতের মামলা করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তোপখানা সড়ক এলাকা থেকে মুফতি রাগীব আহসান ও তার ভাই আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। ওই দিন বিকেলে পিরোজপুর সদর থানা-পুলিশ রাগীবের অন্য দুই ভাই মাহমুদুল হাসান ও খাইরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।

ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সকালে র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মুফতি রাগীব ও তার সহযোগিদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই দিনে মাহমুদুল হাসান ও খাইরুল ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে র‍্যাব রাগীব আহসান ও আবুল বাশার খানকে পিরোজপুর সদর থানায় সোপর্দ করলে পুলিশও তাদের একই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

এরপর রাগীব ও তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পিরোজপুর সদর থানায় পৃথক পাঁচটি মামলা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এসব মামলার মধ্যে চারটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ও একটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়।

গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাগীব আহসান ও তার তিন ভাইয়ের সাতদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠান পিরোজপুরের আদালত।

জানা যায়, গ্রাহকদের কাছে থেকে টাকা নিতে ইমাম, খাদেম ও ধর্মীয় বক্তাদের ব্যবহার করে এহসান গ্রুপ। পরে ওই টাকা দিয়ে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নামে জমি কেনেন রাগীব। সেসব জমির ৯০ শতাংশ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। একপর্যায়ে এহসান গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৬টিই উধাও হয়ে যায়।