০৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩

চোখ ধাঁধাঁনো হিমাচলের ৭ পাহাড়ি এলাকা

নিজস্ব প্রতিনিধি

চোখ ধাঁধাঁনো হিমাচলের ৭ পাহাড়ি এলাকা

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশকে নতুন করে হয়তো পরিচয় করানোর কিছু নেই। অপরূপ সব গ্রাম, নয়নাভিরাম পাহাড়ি শহর, বিচিত্র প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণি, তুষারাবৃত পর্বতমালা, নির্মল ও বিশুদ্ধ প্রকৃতি সবকিছুর সমন্বয়ে এই হিমালয়ান রাজ্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে অন্যদের চেয়ে আলাদা।

বলিউডসহ বিভিন্ন সিনেমার শুটিং নিয়মিতই হয় এসব পাহাড়ি এলাকায়। আপনি যদি হিমাচল সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা নিতে চান তাহলে এই লেখায় রাজ্যটির সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো কিছু জায়গা সম্পর্কে জেনে নিন-

স্পিতি ভ্যালি

স্পিতির বরফে ঢাকা পর্বতমালা, দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ঢাল, শীতল মরুর নজরকাড়া দৃশ্যাবলী আপনাকে ঠিক সেভাবেই অভ্যর্থনা জানাবে যেভাবে আপনি জায়গাটিকে মূল্যায়ন করবেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত স্পিতি ভ্যালি সারা ভারতের শীতলতম স্থানগুলোর একটি।

কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই ভ্রমণ গন্তব্য অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ। বেশ কিছু ট্রেকিং ট্রেইল এখানে অবস্থিত যা থেকে আগ্রহীরা তাদের পছন্দেরটি বেছে নিতে পারেন।

তুলনামূলক সহজটি হলো ধনকর লেকের দিকে দেড় কিলোমিটারের ট্রেক। এই ট্রেইল আপনাকে নিশ্চয়তা দেবে নিচের গ্রাম ও মন্দিরের দৃশ্য দেখার।

জিভি

তীর্থন ভ্যালিতে অবস্থিত এই দৃষ্টিনন্দন গ্রাম্য এলাকাটি ঘন সবুজ বন ও আরও নজরকাড়া দৃশ্যাবলীর মধ্যে অবস্থিত। জায়গাটির যেসব উল্লেখযোগ্য বিষয় এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য বানিয়েছে সেগুলো হলো- তাজা পানির লেকসমূহ, প্রাচীন মন্দিরসমূহ ও ঘন পাইন বনভূমি।

জিভি এমন এক চমৎকার জায়গা যেখানে আপনি না ক্লান্ত হবেন ক্যামেরায় একের পর এক দৃশ্য ফ্রেমবন্দী করে। এর পাশাপাশি একটু ব্যয়বহুল ভিক্টোরিয়ান স্টাইলের কটেজগুলোর কোনোটিতে থাকতে পারলে আপনার ছুটি কাটানো হবে এককথায় দারুণ রোমাঞ্চকর।

কাসাউলি

এই দৃষ্টিনন্দন সেনানিবাস শহরটি ব্রিটিশ শাসকরা প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৮৪২ সালে। এটি হলো আরামদায়ক ছুটি কাটানোর জন্য ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর একটি।

ছবির মতো সুন্দর জায়গাসমূহ, নজরকাড়া ঔপনিবেশিক স্থাপত্যকর্ম ও ঘন সবুজে ঘেরা কাসাউলি আপনাকে এমন বিস্ময় উপহার দেবে। যা খুব কম জায়গাতেই পাবেন।

আপনি যদি দারুণ সুন্দর এই শহরটি এক ফ্রেমে বন্দি করতে চান তাহলে পাহাড় বেয়ে উঠুন মাংকি পয়েন্টে অথবা চলে যান নজরকাড়া সানসেট পয়েন্টে।

কাসাউলিতে ভ্রমণকালে ট্রয় টেনে চড়তে ভুলবেন না, যাতে চতুর্দিকের পাহাড়চূড়া ও গ্রামগুলোর দৃশ্যাবলী অবলোকন করতে পারেন।

ফাগু

নিরিবিলি ও চমৎকারভাবে তুষারাবৃত এই গ্রাম আপনাকে কাছে টানবে তার সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই জাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জায়গাটিতে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা নগরী থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। আপেল চাষের জন্য এলাকাটির খ্যাতি আছে।

পেছনে হিমালয় ও বিস্তৃত মাঠের সমন্বয়ে ফাগু এমন একটি রোমান্টিক পরিবেশকে তুলে ধরে যার প্রেমে পড়ে যান এমনকি নন-রোমান্টিকরাও। এটিও বিশ্বাাস করা হয় যে, ‘ফাগু’ নামটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ফগ অর্থাৎ কুয়াশা থেকে।

সারা বছরজুড়ে জায়গাটি কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। নিরিবিলি এলাকা হওয়ায় আপনি এখানকার সৌন্দর্যকে মূল্যায়ন করতে এবং পুরোপুরি প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন।

তীর্থন ভ্যালি

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তীর্থন ভ্যালি হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় অবস্থিত। এলাকাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত তীর্থন নদীর নামেই নামকরণ হয়েছে তীর্থান ভ্যালির।

যেহেতু এটি গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কের প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে তাই আপনার হাতে বাড়তি সুযোগ আছে ঘুরে বেড়ানো ও প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জায়গাটি একই সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী উভয়ের জন্যই দারুণ। এর পাশাপাশি হিমালয় পর্বত দ্বারা সজ্জিত হওয়া ও তুষারাবৃত পাহাড়চূড়ার উপস্থিতির কারণে এরকম আরেকটি জায়গা খুব সহজে পাওয়া যাবে না।

কিন্নর ভ্যালি

হিমাচল প্রদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি হলো কিন্নর ভ্যালি। এখানে পাওয়া যাবে তুষারাবৃত পাহাড় চূড়া, পাথুরে পর্বত ও ঘন সবুজ পাহাড়ি ঢালের (যা আলপাইন বন ও ফলের বাগানে পরিপূর্ণ) সমন্বয়।

এই এলাকার ছবির মতো সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি আপনি সময় কাটাতে পারেন প্রাচীন মন্দিরসমূহ, আকর্ষণীয় স্থাপত্যকর্ম দেখে ও মুখরোচক স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিয়ে। এসবের মাধ্যমে পরিচিত হতে পারবেন হিমাচলের পুরনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে।

সোলাং ভ্যালি

বিশাল হিমবাহ আর চমকপ্রদ তুষারাবৃত পাহাড়চূড়া দ্বারা পরিবেষ্টিত সৌন্দর্যের দেখা পাবেন সোলাং ও বিয়াস কুণ্ডে। একই সঙ্গে নির্জনতা ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর দেখা মিলবে সোলাং ভ্যালিতে।

যা একটি সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ। প্যারাগ্লাইডিং, হর্স রাইডিং, স্কিয়িং ও আরও বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেন চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় : ০৩:২৪:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২
১৮৫ বার পড়া হয়েছে

চোখ ধাঁধাঁনো হিমাচলের ৭ পাহাড়ি এলাকা

আপডেট সময় : ০৩:২৪:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশকে নতুন করে হয়তো পরিচয় করানোর কিছু নেই। অপরূপ সব গ্রাম, নয়নাভিরাম পাহাড়ি শহর, বিচিত্র প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণি, তুষারাবৃত পর্বতমালা, নির্মল ও বিশুদ্ধ প্রকৃতি সবকিছুর সমন্বয়ে এই হিমালয়ান রাজ্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে অন্যদের চেয়ে আলাদা।

বলিউডসহ বিভিন্ন সিনেমার শুটিং নিয়মিতই হয় এসব পাহাড়ি এলাকায়। আপনি যদি হিমাচল সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা নিতে চান তাহলে এই লেখায় রাজ্যটির সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো কিছু জায়গা সম্পর্কে জেনে নিন-

স্পিতি ভ্যালি

স্পিতির বরফে ঢাকা পর্বতমালা, দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ঢাল, শীতল মরুর নজরকাড়া দৃশ্যাবলী আপনাকে ঠিক সেভাবেই অভ্যর্থনা জানাবে যেভাবে আপনি জায়গাটিকে মূল্যায়ন করবেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত স্পিতি ভ্যালি সারা ভারতের শীতলতম স্থানগুলোর একটি।

কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই ভ্রমণ গন্তব্য অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ। বেশ কিছু ট্রেকিং ট্রেইল এখানে অবস্থিত যা থেকে আগ্রহীরা তাদের পছন্দেরটি বেছে নিতে পারেন।

তুলনামূলক সহজটি হলো ধনকর লেকের দিকে দেড় কিলোমিটারের ট্রেক। এই ট্রেইল আপনাকে নিশ্চয়তা দেবে নিচের গ্রাম ও মন্দিরের দৃশ্য দেখার।

জিভি

তীর্থন ভ্যালিতে অবস্থিত এই দৃষ্টিনন্দন গ্রাম্য এলাকাটি ঘন সবুজ বন ও আরও নজরকাড়া দৃশ্যাবলীর মধ্যে অবস্থিত। জায়গাটির যেসব উল্লেখযোগ্য বিষয় এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য বানিয়েছে সেগুলো হলো- তাজা পানির লেকসমূহ, প্রাচীন মন্দিরসমূহ ও ঘন পাইন বনভূমি।

জিভি এমন এক চমৎকার জায়গা যেখানে আপনি না ক্লান্ত হবেন ক্যামেরায় একের পর এক দৃশ্য ফ্রেমবন্দী করে। এর পাশাপাশি একটু ব্যয়বহুল ভিক্টোরিয়ান স্টাইলের কটেজগুলোর কোনোটিতে থাকতে পারলে আপনার ছুটি কাটানো হবে এককথায় দারুণ রোমাঞ্চকর।

কাসাউলি

এই দৃষ্টিনন্দন সেনানিবাস শহরটি ব্রিটিশ শাসকরা প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৮৪২ সালে। এটি হলো আরামদায়ক ছুটি কাটানোর জন্য ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর একটি।

ছবির মতো সুন্দর জায়গাসমূহ, নজরকাড়া ঔপনিবেশিক স্থাপত্যকর্ম ও ঘন সবুজে ঘেরা কাসাউলি আপনাকে এমন বিস্ময় উপহার দেবে। যা খুব কম জায়গাতেই পাবেন।

আপনি যদি দারুণ সুন্দর এই শহরটি এক ফ্রেমে বন্দি করতে চান তাহলে পাহাড় বেয়ে উঠুন মাংকি পয়েন্টে অথবা চলে যান নজরকাড়া সানসেট পয়েন্টে।

কাসাউলিতে ভ্রমণকালে ট্রয় টেনে চড়তে ভুলবেন না, যাতে চতুর্দিকের পাহাড়চূড়া ও গ্রামগুলোর দৃশ্যাবলী অবলোকন করতে পারেন।

ফাগু

নিরিবিলি ও চমৎকারভাবে তুষারাবৃত এই গ্রাম আপনাকে কাছে টানবে তার সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই জাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জায়গাটিতে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা নগরী থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। আপেল চাষের জন্য এলাকাটির খ্যাতি আছে।

পেছনে হিমালয় ও বিস্তৃত মাঠের সমন্বয়ে ফাগু এমন একটি রোমান্টিক পরিবেশকে তুলে ধরে যার প্রেমে পড়ে যান এমনকি নন-রোমান্টিকরাও। এটিও বিশ্বাাস করা হয় যে, ‘ফাগু’ নামটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ফগ অর্থাৎ কুয়াশা থেকে।

সারা বছরজুড়ে জায়গাটি কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। নিরিবিলি এলাকা হওয়ায় আপনি এখানকার সৌন্দর্যকে মূল্যায়ন করতে এবং পুরোপুরি প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন।

তীর্থন ভ্যালি

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তীর্থন ভ্যালি হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় অবস্থিত। এলাকাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত তীর্থন নদীর নামেই নামকরণ হয়েছে তীর্থান ভ্যালির।

যেহেতু এটি গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কের প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে তাই আপনার হাতে বাড়তি সুযোগ আছে ঘুরে বেড়ানো ও প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জায়গাটি একই সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী উভয়ের জন্যই দারুণ। এর পাশাপাশি হিমালয় পর্বত দ্বারা সজ্জিত হওয়া ও তুষারাবৃত পাহাড়চূড়ার উপস্থিতির কারণে এরকম আরেকটি জায়গা খুব সহজে পাওয়া যাবে না।

কিন্নর ভ্যালি

হিমাচল প্রদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি হলো কিন্নর ভ্যালি। এখানে পাওয়া যাবে তুষারাবৃত পাহাড় চূড়া, পাথুরে পর্বত ও ঘন সবুজ পাহাড়ি ঢালের (যা আলপাইন বন ও ফলের বাগানে পরিপূর্ণ) সমন্বয়।

এই এলাকার ছবির মতো সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি আপনি সময় কাটাতে পারেন প্রাচীন মন্দিরসমূহ, আকর্ষণীয় স্থাপত্যকর্ম দেখে ও মুখরোচক স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিয়ে। এসবের মাধ্যমে পরিচিত হতে পারবেন হিমাচলের পুরনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে।

সোলাং ভ্যালি

বিশাল হিমবাহ আর চমকপ্রদ তুষারাবৃত পাহাড়চূড়া দ্বারা পরিবেষ্টিত সৌন্দর্যের দেখা পাবেন সোলাং ও বিয়াস কুণ্ডে। একই সঙ্গে নির্জনতা ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর দেখা মিলবে সোলাং ভ্যালিতে।

যা একটি সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ। প্যারাগ্লাইডিং, হর্স রাইডিং, স্কিয়িং ও আরও বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেন চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা।