০৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩

দেশে লিউকেমিয়ায় প্রতিবছর মারা যান ২ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি

দেশে লিউকেমিয়ায় প্রতিবছর মারা যান ২ হাজার মানুষ

বাংলাদেশে এক বছরে লিউকেমিয়ায় দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। নতুন করে শনাক্ত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষের। লিউকেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা মূলত রক্ত স্বল্পতা, দুর্বলতা, রক্তপাত, জ্বর এসব উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যানসার) দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগ আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য উঠে আসে।

সেমিনারে উঠে আসে, গ্লোবোক্যান ২০২০ এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে নতুন করে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। একই সঙ্গে লিউকেমিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তিন লাখের বেশি মানুষের।

সেমিনারে বলা হয়, লিউকেমিয়ার ধরন অনুসারে চিকিৎসায় ভিন্ন হয়ে থাকে। লিউকেমিয়া একিউট ও ক্রনিক এ দুই ধরনের হয়ে থাকে। ধরন ভেদে চিকিৎসায় ভিন্নতা হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের পরে রোগের ঝুঁকির পর্যায় বিবেচনা করে রোগের চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়। সিবিসি, পিবিএফ ফ্লো সাইটোমেটি, বোন ম্যারো পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং সাইটোজেনেটিক ও মলিকুলার পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর ঝুঁকির স্তর সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়।

মুখে খাওয়ার ওষুধ, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা হয়।

চিকিৎসা পরবর্তীতে রোগ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ওষুধের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করা হতে পারে। ক্রনিক লিউকেমিয়া মিত্র চিকিৎসায় সিএলএল ও সিএমএল চিকিৎসায় টার্গেটেড থেরাপি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এসব ওষুধের অধিকাংশই এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়।

বক্তারা জানান, রোগ বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে হেমাটোপয়েটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সম্ভব। উচ্চ ঝুঁকির একিউট লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় হেমাটোপয়েটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ লিউকেমিয়া রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লিউকেমিয়া সব রোগী যাতে সহজে জরুরি চিকিৎসাসেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসার অন্যান্য উপকরণ সুলভে পেতে পারেন সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও রোগ নির্ণয়ের ও ঝুঁকি নির্ণয়ের সর্বাধুনিক ও প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সহজলভ্য এবং দেশে হেমাটোপরেটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্ভিস আরও বিস্তৃত করার বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

লিউকেমিয়াসহ সব ক্যানসারের বিশ্ব মানের চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ। সেমিনারে হেমাটোলজী বিভাগের রেসিডেন্ট ডা . শারমিন ইয়াসমিন ও ডা. মীম জারিন তাসনিম প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন মেডিসিন অনুষদের ডিন হেমাটোলজী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, হেমাটোলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস ও অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হেমাটোলোজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে ও ডা. মারুফ রেজা কবির ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় : ০৪:০৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
১৯১ বার পড়া হয়েছে

দেশে লিউকেমিয়ায় প্রতিবছর মারা যান ২ হাজার মানুষ

আপডেট সময় : ০৪:০৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে এক বছরে লিউকেমিয়ায় দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। নতুন করে শনাক্ত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষের। লিউকেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা মূলত রক্ত স্বল্পতা, দুর্বলতা, রক্তপাত, জ্বর এসব উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যানসার) দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগ আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য উঠে আসে।

সেমিনারে উঠে আসে, গ্লোবোক্যান ২০২০ এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে নতুন করে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। একই সঙ্গে লিউকেমিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তিন লাখের বেশি মানুষের।

সেমিনারে বলা হয়, লিউকেমিয়ার ধরন অনুসারে চিকিৎসায় ভিন্ন হয়ে থাকে। লিউকেমিয়া একিউট ও ক্রনিক এ দুই ধরনের হয়ে থাকে। ধরন ভেদে চিকিৎসায় ভিন্নতা হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের পরে রোগের ঝুঁকির পর্যায় বিবেচনা করে রোগের চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়। সিবিসি, পিবিএফ ফ্লো সাইটোমেটি, বোন ম্যারো পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং সাইটোজেনেটিক ও মলিকুলার পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর ঝুঁকির স্তর সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়।

মুখে খাওয়ার ওষুধ, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা হয়।

চিকিৎসা পরবর্তীতে রোগ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ওষুধের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করা হতে পারে। ক্রনিক লিউকেমিয়া মিত্র চিকিৎসায় সিএলএল ও সিএমএল চিকিৎসায় টার্গেটেড থেরাপি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এসব ওষুধের অধিকাংশই এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়।

বক্তারা জানান, রোগ বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে হেমাটোপয়েটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সম্ভব। উচ্চ ঝুঁকির একিউট লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় হেমাটোপয়েটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ লিউকেমিয়া রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লিউকেমিয়া সব রোগী যাতে সহজে জরুরি চিকিৎসাসেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসার অন্যান্য উপকরণ সুলভে পেতে পারেন সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও রোগ নির্ণয়ের ও ঝুঁকি নির্ণয়ের সর্বাধুনিক ও প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সহজলভ্য এবং দেশে হেমাটোপরেটিক সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্ভিস আরও বিস্তৃত করার বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

লিউকেমিয়াসহ সব ক্যানসারের বিশ্ব মানের চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেমাটোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ। সেমিনারে হেমাটোলজী বিভাগের রেসিডেন্ট ডা . শারমিন ইয়াসমিন ও ডা. মীম জারিন তাসনিম প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন মেডিসিন অনুষদের ডিন হেমাটোলজী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, হেমাটোলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস ও অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হেমাটোলোজি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. মিলি দে ও ডা. মারুফ রেজা কবির ।