০৫:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩

ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত খিরার ক্ষেত, দিশেহারা কৃষক

উপজেলা প্রতিনিধি

ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত খিরার ক্ষেত, দিশেহারা কৃষক

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত খিরার ক্ষেত। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগ করার পরও প্রতিকার মিলছে না। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার খিরা চাষিরা। অন্তত পুঁজিটা হলেও তুলতে পারবেন এমন আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মিরসরাই উপজেলায় ১০০ একর জমিতে খিরা আবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে। এর চেয়ে কিছু কম আবাদ হয়েছে হিঙ্গুলী ইউনিয়নে।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভজনক হওয়ায় এখানকার প্রায় অর্ধশত কৃষক বিগত ১৫ বছর ধরে খিরা আবাদ করে আসছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন আবাদের পরিধি বাড়ছে। কিন্তু এ বছর চাষিদের আশায় গুড়েবালি। অধিকাংশ খিরা গাছ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে খিরা আবাদ করে আসছি। প্রতিবছর ভালো লাভবান হয়েছি। এ বছর ফলন আসার আগে গাছগুলো হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। মেডিসিন ও স্প্রে দিয়েছি, কোনো লাভ হয়নি। ৩০ শতক জমিতে খিরা আবাদ করতে এ পর্যন্ত আমার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন জমিতে সারাদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি, অন্তত পুঁজিটা যদি তুলতে পারি।’

আলা উদ্দিন বলেন, ‘২৫ শতক জমিতে খিরা চাষ করেছি। প্রথমে গাছগুলো ভালো ছিল। গত কয়েকদিন আগে দেখছি গাছের গোড়ায় পছন ধরেছে। মেডিসিন প্রয়োগ করার পর দেখছি পুরো গাছ ঝিমিয়ে পড়েছে। গাছে এখনো ফুল আসেনি। অথচ প্রতিবছর এ সময় খিরা বাজারে বিক্রি করে থাকি। মনে হচ্ছে, এবার লোকসানে পড়তে হবে।’

শুধু কৃষক জয়নাল, আলা উদ্দিন নন, এভাবে অনেক কৃষকের জমিতে আবাদ করা খিরা ক্ষেত ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ একর জমিতে খিরা আবাদ হয়েছে। তবে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কৃষকরা দেরিতে খিরা আবাদ করেছে। খিরা গাছ প্রতিবছরই হলুদ হয়ে থাকে। তবে মেডিসিন প্রয়োগ করলে ঠিক হয়ে যায়। এবার ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ওষুধ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। আমি কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, জমির যে অংশের গাছগুলো হলুদ হয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে; সেগুলো চিহ্নিত করে তুলে ফেলে দিতে হবে। কিন্তু তারা গাছগুলো তুলে ফেলে না দেওয়ায় পুরো জমির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, ‘কৃষকদের আমরা বার বার বলে থাকি, এ রোগ দেখার সাথে সাথে গাছগুলো চিহ্নিত করে উপড়ে ফেলতে। কিন্তু চাষিরা তা করেন না। এতে পুরো জমিতে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারপরও সুস্থ থাকা গাছের ফলন বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় : ০১:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
২২৮ বার পড়া হয়েছে

ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত খিরার ক্ষেত, দিশেহারা কৃষক

আপডেট সময় : ০১:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত খিরার ক্ষেত। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগ করার পরও প্রতিকার মিলছে না। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার খিরা চাষিরা। অন্তত পুঁজিটা হলেও তুলতে পারবেন এমন আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মিরসরাই উপজেলায় ১০০ একর জমিতে খিরা আবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে। এর চেয়ে কিছু কম আবাদ হয়েছে হিঙ্গুলী ইউনিয়নে।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভজনক হওয়ায় এখানকার প্রায় অর্ধশত কৃষক বিগত ১৫ বছর ধরে খিরা আবাদ করে আসছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন আবাদের পরিধি বাড়ছে। কিন্তু এ বছর চাষিদের আশায় গুড়েবালি। অধিকাংশ খিরা গাছ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে খিরা আবাদ করে আসছি। প্রতিবছর ভালো লাভবান হয়েছি। এ বছর ফলন আসার আগে গাছগুলো হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। মেডিসিন ও স্প্রে দিয়েছি, কোনো লাভ হয়নি। ৩০ শতক জমিতে খিরা আবাদ করতে এ পর্যন্ত আমার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন জমিতে সারাদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি, অন্তত পুঁজিটা যদি তুলতে পারি।’

আলা উদ্দিন বলেন, ‘২৫ শতক জমিতে খিরা চাষ করেছি। প্রথমে গাছগুলো ভালো ছিল। গত কয়েকদিন আগে দেখছি গাছের গোড়ায় পছন ধরেছে। মেডিসিন প্রয়োগ করার পর দেখছি পুরো গাছ ঝিমিয়ে পড়েছে। গাছে এখনো ফুল আসেনি। অথচ প্রতিবছর এ সময় খিরা বাজারে বিক্রি করে থাকি। মনে হচ্ছে, এবার লোকসানে পড়তে হবে।’

শুধু কৃষক জয়নাল, আলা উদ্দিন নন, এভাবে অনেক কৃষকের জমিতে আবাদ করা খিরা ক্ষেত ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ একর জমিতে খিরা আবাদ হয়েছে। তবে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কৃষকরা দেরিতে খিরা আবাদ করেছে। খিরা গাছ প্রতিবছরই হলুদ হয়ে থাকে। তবে মেডিসিন প্রয়োগ করলে ঠিক হয়ে যায়। এবার ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ওষুধ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। আমি কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, জমির যে অংশের গাছগুলো হলুদ হয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে; সেগুলো চিহ্নিত করে তুলে ফেলে দিতে হবে। কিন্তু তারা গাছগুলো তুলে ফেলে না দেওয়ায় পুরো জমির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, ‘কৃষকদের আমরা বার বার বলে থাকি, এ রোগ দেখার সাথে সাথে গাছগুলো চিহ্নিত করে উপড়ে ফেলতে। কিন্তু চাষিরা তা করেন না। এতে পুরো জমিতে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারপরও সুস্থ থাকা গাছের ফলন বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন।’