ভুল চিকিৎসার অভিযোগ, বিচার চায় পরিবার

বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এম এস আরফিনের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলেছেন মেহবিশ জাহান নামের এক রোগীর পরিবার।
সোমবার (২৯ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সম্মেলন করে এমন অভিযোগ তুলে এই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মেহবিশ জাহানের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে মেহবিশ জাহানের বাবা শেখ জসীম উদ্দিন কবির এবং স্বামী আহানাফ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে আহানাফ বলেন, ২০১৭ সালে মেহবিশ জাহান ডা. এম এস আরফিনের শরণাপন্ন হন। ডা. এম এস আরফিন তখন স্কয়ার হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তারপর রোগী ২০২১ সালে একবার এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে পুনরায় অগ্ন্যাশয়ে সিস্টের জন্য ডা. এম এস আরফিনের কাছ পরামর্শ করেন।
‘৩১ জুলাই ডা. এম এস আরফিনের সঙ্গে পরামর্শের পর তিনি রোগীকে কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন এবং পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তাকে আবার দেখা করতে বলেন। ২ আগস্ট রোগীর সিটি স্ক্যান ও রক্ত পরীক্ষা করা হয় এবং ৩ আগস্ট একটি এন্ডোস্কোপি করা হয়, যা ডা. এম এস আরফিন নিজেই করেছিলেন।’
আহানাফ বলেন, ৬ আগস্ট সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে মেহবিশ ডা. এম এস আরফিনের কাছে পরামর্শের জন্য যান। ওই তারিখেই ডা. আরফিন পরবর্তী প্রসিডিউর ‘অগ্ন্যাশয় সুডোসিস্ট ড্রেইনেজ’ এর জন্য ৮ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে যেকোনো দিন রোগীকে হাসপাতালে এসে প্রসিডিউর সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন।
ডা. আরফিন কখনো ইআরসিপি প্রসিডিউর এর ঝুঁকি সম্পর্কে রোগী বা রোগীর পরিবারকে অবহিত এবং সতর্ক করেননি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে মেহবিশ জাহানের স্বামী বলেন, ডা. আরফিন কখনো ইআরসিপি প্রসিডিউর এর ঝুঁকি সম্পর্কে রোগী বা রোগীর পরিবারকে অবহিত এবং সতর্ক করেননি, যাতে রোগী বা রোগীর পরিবার মানসিকভাবে এবং যৌক্তিকভাবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।
তিনি বলেন, রোগী ৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রসিডিউর এর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অস্ত্রোপচার/প্রক্রিয়ার কল পাওয়ার জন্য বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। অস্ত্রোপচারের আগে কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতালের স্টাফ আসেননি এবং রোগী, রোগীর অভিভাবক/পরিবারকে ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেননি। রোগী বিকেল সাড়ে ৩টায় ইআরসিপি বিভাগে যান। রোগীর স্বামীকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ইআরসিপি রুমে ডাকা হয়েছিল এবং ডা. আরফিন বলেছিলেন যে রোগীর অবস্থা গুরুতর। জানানো হয় রোগীর একটি আর্টারি কেটে গেছে এবং তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউতে স্থানান্তরিত করার সময় ডা. ইমরুল হাসান হস্তক্ষেপ করেন এবং রোগীকে আইসিইউতে না নিয়ে সরাসরি ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অপারেশনের পর রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন এবং তার অবস্থা এতটাই সংকটপূর্ণ ছিল যে তাকে আইসিইউতে তিনদিন রাখা হয়। পরে তাকে এইচডিইউতে দেড় দিন রাখা হয়। এরপর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। রোগী হাসপাতালে থাকাকালীন ডা. আরফিন কখনই রোগীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ডাকেননি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৭০ হাজার টাকা বিলের ধারণা দিলেও পরে ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা চূড়ান্ত বিল করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা। এ বিষয়ে বলা হয়, চিকিৎসা বাস্তবায়নে ডা. আরফিন ব্যর্থ হন। তার ব্যর্থতার মাশুল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর নিকট থেকে আদায় করেন। যার পরিমাণ ৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। তাদের সেই তথাকথিত দুর্ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ৪০ হাজার টাকা নগদ ছাড় দিয়ে ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকার চূড়ান্ত বিল করে। রোগী তার অফিস থেকে পাওয়া বিমা কাভারেজের ২ লাখ ১৭ হাজার টাকার সঙ্গে আরও ২ লাখ টাকা যুক্ত করে হাসপাতালের চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করেন। রোগী যেই রোগ নিরাময়ের জন্য ড. আরফিনের শরণাপন্ন হন, সেই চিকিৎসা তিনি পাননি। উল্টো ভুল চিকিৎসায় রোগীর মূল চিকিৎসা আগামী ৬ মাস বিলম্বিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মেহবিশ জাহানের বাবা শেখ জসীম উদ্দিন কবির বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়, আমি সেটাই চাই। যে চিকিৎসকরা রোগীকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে শুধু টাকার পেছনে ছোটেন আমি তাদের বিচার চাই।