৯ দিনেও খোঁজ মেলেনি তিনজনের

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীর আওলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় এক শিশুসহ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার নবম দিনে উদ্ধার অভিযান চললেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
ভয়াবহ ওই নৌকাডুবিতে এখনো নিখোঁজরা হলেন- দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর গ্রামের মদনের ছেলে ভূপেন চন্দ্র বর্মণ ওরফে পানিয়া (৪০), বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার গ্রামের খগেন্দ্র নাথ বর্মণের ছেলে সুরেন্দ্র নাথ বর্মণ (৬৫) এবং উপজেলা সদরের ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথের শিশুকন্যা জয়া রানী (৪)।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর নৌদুর্ঘটনার পরপরই তাদের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। শুরুতে জেলার পাঁচ উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট এবং কুড়িগ্রাম, রংপুর ও রাজশাহীর তিনটি ডুবুরি দল উদ্ধার কাজ করলেও তৃতীয়দিন থেকে আরও চারটি ইউনিট এবং দিনাজপুর জেলার আরও একটি ডুবুরি দল উদ্ধার কাজে নিয়োজিত করা হয়। দুর্ঘটনার অষ্টমদিন রোববারও ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এবং ১২ জনের চারটি ডুবুরি দলে ফায়ার সার্ভিসের ৭০ জন উদ্ধারকর্মী কাজ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম চারদিনে ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ৩১ জন নারী, ২১ জন শিশু এবং ১৭ পুরুষ। এ ঘটনায় খোলা জরুরি তথ্যকেন্দ্রের হিসাব মতে, এখনো তিনজন নিহত রয়েছেন।
শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্র শিকারপুর গ্রামের নিখোঁজ ভূপেন চন্দ্র বর্মণের ছেলে তপন চন্দ্র বর্মণ বলেন, এখন আমার বাবাকে জীবিত পাওয়া আর আশা নেই। সঠিকভাবে মরদেহ পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছি। তবে যে কোনো অবস্থাতেই হোক, সৎকার করার মতো অবস্থায় বাবাকে পেলে ছেলের দায়িত্বটা পালন করতে পারতাম। এত মানুষ মারা গেলো, এত মানুষ তাদের স্বজনদের মরদেহ পেলো। আমি এতই হতভাগা যে, বাবার শেষকৃত্য করার ভাগ্য জুটলো না!
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল আলম বলেন, নৌকাডুবির ঘটনায় আমাদের ৭০ জন উদ্ধারকর্মী উদ্ধার কাজ করেছেন। আমরা ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে সোমবার থেকে উদ্ধার কাজ সীমিত করা হয়েছে। এরইমধ্যে ১২ জনের ডুবুরি দলকে উদ্ধার কাজ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে নিখোঁজ তিনজনের জন্য আমাদের জেলার উদ্ধারকর্মীরা সীমিতভাবে উদ্ধার কাজ করবেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে মহালয়া পূজা উৎযাপন করতে শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর মাড়েয়া পাড় আওলিয়ার ঘাট থেকে বড়শশী পাড়ের শ্রী শ্রী শক্তিপীঠ বদ্বেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে আওলিয়ার ঘাটে নৌকাটি ডুবে যায়। এরপর উদ্ধার অভিযানের প্রথম চারদিনে ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।